Type Here to Get Search Results !

মিয়ানমারের বিহারে বিমান হামলা, ১১ শিশুসহ নিহত ১৩

মিয়ানমারের বিহানরে বিমান হামলা, ১১ শিশুসহ নিহত ১৩

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

মিয়ানমারের বিহানরে বিমান হামলা, ১১ শিশুসহ নিহত ১৩

মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সাগাইং অঞ্চলের দেপাইন গ্রামের একটি স্কুলে সেনাবাহিনীর হামলায় ১১ জন শিশু সহ কমপক্ষে ১৩ জন নিহত ও আরো অনেকে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ (শুক্রবার) এই হামলা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। হামলার শিকার স্কুলটি একটি বৌদ্ধ বিহারের অভ্যন্তরে অবস্থিত এবং এখানে প্রায় ২০০ এরও বেশি শিক্ষার্থী শিশু ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। নিহতদের কয়েকজন সেনাদের চালানো বিমান হামলায় এবং বাকিরা সেনাদের পায়ে পিস্ট হয়ে নিহত হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। 

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, সামরিক বাহিনী স্বীকার করেছে যে তারা কেন্দ্রীয় সাগাইং অঞ্চলের দেপাইন টাউনশিপ গ্রামের স্কুলে গুলি চালিয়েছে। সেনাবাহিনী তরফ থেকে জানা হয়েছে এই স্কুল থেকেই জান্তা বিরোধী বিদ্রোহীরা তাদের সদস্যদের আক্রমণ করা হয়। 

মিয়ানমারের বিহানরে বিমান হামলা, ১১ শিশুসহ নিহত ১৩

সাগাইং অঞ্চলটি মায়ানমারের সেনা শাসক বিরোধী ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি হওয়ায় শাসক সেনারা গত বছর থেকে ওই এলাকার গ্রামগুলোতে হামলা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। সামরিক বাহিনী ক্রমাগতভাবে বেসামরিক এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। প্রয়োজনে আর্টিলারি ও বিমান হামলারও আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর এমন আহ্বানের পর হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত ২০ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারে এমন হামলার নিন্দা জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছেন। গুতেরেসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "সশস্ত্র সংঘাতের সময় স্কুলগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে হবে যেখানে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। তাছাড়া স্কুল শিক্ষা লাভের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে স্কুল এবং হাসপাতালের উপর হামলা ও শিশুদের হত্যা করা ছয়টি গুরুতর আইন লঙ্ঘনের একটি। মিয়ানমারে সশস্ত্র সংঘাতের প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।" 

২০২১ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে সামরিক নেতৃত্বাধীন শাসক গুষ্টি ক্ষমতা দখল করে বিরোধীদের দমন করতে নির্যাতন নিপীড়ন চালচ্ছে অব্যহত ভাবে। নির্যাতন থেকে রেহায় পাচ্ছে না দেশের সম্মানিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী সংঘও। গত ১৮ মাস ধরে সহিংস দমন সত্ত্বেও জান্তা সরকার ব্যাপক বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ আন্দোলনের উপর সামরিক ক্র্যাকডাউনের ফলে সাধারণ মানুষ সশস্ত্র প্রতিরোধের দিকে ঝুঁকছে। 

১৬ সেপ্টেম্বরের হামলার প্রতিবাদে ইউনিসেফ মিয়ানমার গত ১৯ সেপ্টেম্বর একটি বিবৃতিতে জারি করেছে। বিবৃতিতে স্কুল হামলার নিন্দা করা হয়েছে। ইউনিসেফ তাদের বিবৃতিতে বলেছে, “১৬ সেপ্টেম্বর, বেসামরিক এলাকায় বিমান হামলা এবং নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ফলে কমপক্ষে ১১ জন শিশু নিহত হয়েছে। একই স্কুলের অন্তত ১৫ জন শিশু এখনও নিখোঁজ রয়েছে। ইউনিসেফ নিখোঁজ শিশুদের অবিলম্বে এবং নিরাপদ মুক্তির আহ্বান করছে।”

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা চলাকালীন সময়ে ৭ জন শিশু সেখানেই নিহত হয়। পরে নিহত সাত শিশুর মৃতদেহ সহ আহতদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে আরো ২ শিশুর মৃত্যু হয়, পরে চিকিৎসা চলাকালিন সময়ে আরো ২ জন শিশু মারা যায়। 

বিমান হামলার পর বৌদ্ধ মন্দিরের স্কুল দেখতে যাওয়া এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, "গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া কিছু শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে গেছে। একটি খণ্ডবিখণ্ড শিশুর লাশ মুড়িয়ে সেনাবাহিনীর ব্যবহার্য একটি বাঁশের [মিয়ানমারের সামরিক সৈন্যদের ব্যাকপ্যাক] ঝুড়িতে করে নেওয়া হয়েছে। স্কুলের ভিতরে দেখে মনে হয়েছে যেন রক্তের পুকুর। মাংসের টুকরো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল সব জায়গায়, বৈদ্যুতিক পাখায়, দেয়ালে এবং ছাদে মাংস পিণ্ডের ছোপ তখনো লেগেছিল।" 

মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ড-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) রিপোর্ট করেছে  যে, ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিয়ানমারে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সাথে জড়িত ২,৩১১ জন বেসামরিক নাগরিক জান্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। সংস্থাটি উল্লেখ করেছে যে এটি আমাদের যাচাই করা চিত্র মাত্র প্রকৃত পক্ষে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে। 

অভ্যুত্থান-পরবর্তী ৮৪ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী সহ মোট ১২,৪৬২ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ১২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জনশুমারির তথ্য অনুসারে, মিয়ানমারের জনসংখ্যার প্রায় ৮৯.৮ শতাংশ বৌদ্ধ, ৬.৩ শতাংশ খ্রিস্টান, ২.৩ শতাংশ মুসলিম এবং ০.৫ শতাংশ হিন্দু। বাকি ১ শতাংশ উপজাতীয় এবং অন্যান্য ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। মিয়ানমারের সকল প্রধান ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো সহ বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং পাদ্রীরা রাস্তায় নেমেছে এবং সামরিক দখলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যহত রেখেছে৷

সূত্রঃ  buddhabarta.com 

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad