মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা হেনস্তার শিকার হচ্ছে সেনাবাহিনীর দ্বারা
২০২১ সালে মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতকারী জান্তা গত ১৮ মাসে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাদে কমপক্ষে ৫৬ জন বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আটক করেছে। শুক্রবার মার্কিন সংবাদ সংস্থা রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ) এই তথ্য জানিয়েছে।
RFA এর রিপোর্ট জানিয়েছে, "সামরিক শাসনের বিরোধিতাকারী
মিয়ানমারের প্রধান ধর্ম বৌদ্ধসহ অন্যান্য অনেক ধর্মীয় নেতা হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন এবং গ্রেপ্তারের হুমকির মধ্যে পলাতক রয়েছেন।
মিডিয়া রিপোর্ট এবং স্থানীয় সূত্র
ও সাক্ষাত্কারের উপর ভিত্তি করে একটি তদন্তে পাওয়া গেছে যে জান্তা সরকার
বৌদ্ধ ধর্মযাজক সদস্যদের টার্গেট করেছে যারা ১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালের অভ্যুত্থানের
পর থেকে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করে
আসছে। জান্তা সরকার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সশস্ত্র প্রতিরোধের সমর্থক হিসাবে চিহ্নিত করে এবং কখনও কখনও তাদের বিচারে
আওতায়ও আনছে।"
মিডিয়া
রিপোর্ট অনুসারে আটককৃত কয়েকজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে
কিন্তু এই সংখ্যা ঠিক কত তা সঠিক করে বলতে পারেনি আরএফএ।
প্রধানত থেরবাদ বৌদ্ধ দেশ মায়ানমারে (পূর্বে বার্মা) বৌদ্ধ ভিক্ষুরা অত্যন্ত প্রভাবশালী।
ভিক্ষুগণ ২০০৭ সালেও একই ভাবে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভের অগ্রভাগে দাঁড়িয়ে
নেতৃত্ব দিয়েছিল। ইতিহাস ২০০৭ সালের আন্দোলনটি জাফরান বিপ্লব
নামে পরিচিত।
এই আন্দোলনে সাধারণ জনগণের পূর্ণ সমর্থন ছিল।
উল্লেখ্য, মায়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সংখ্যা প্রায়
৫০০,০০০-এর বেশি বলে অনুমান করা হয়, প্রধানত ইয়াঙ্গুন এবং মান্দালে শহরে এবং এর আশেপাশে প্রায় ৭৫,০০০ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী
বসবাস করে।
২০১৬ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুসারে এই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির জনসংখ্যার প্রায় ৮৯.৮ শতাংশ বৌদ্ধ,
৬.৩ শতাংশ খ্রিস্টান, ২.৩ শতাংশ মুসলিম
এবং ০.৫ শতাংশ হিন্দু। বাকি ১ শতাংশ উপজাতীয় ও
অন্যান্য ধর্মের অন্তর্ভুক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাগাইং এর আয়াদাউ টাউনশিপের একটি গ্রাম এনগওয়ে টুইন-এর একজন বাসিন্দা
বলেন, এই
এলাকায় সামরিক শাসনের শক্তিশালী বিরোধিতা
আছে, আমরা
দেখেছি যে গত ১৫ আগস্ট সামরিক সমর্থক মিলিশিয়া সদস্যরা
স্থানীয় পাব্বাহ ইয়োন মঠের প্রধান
ভিক্ষুকে জান্তা সৈন্যরা মারধর করে এবং গ্রেপ্তার করে
নিয়ে যায়।
স্থানীয়
বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে আরএফএ তাদের একটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে, যেখানে
বলা হয়েছে-“তারা মঠে হামলা চালায় এবং সন্ন্যাসীদের গ্রেপ্তার করে।
ভিক্ষুদের টেনে-হিছড়ে বের করে বেশ
অসম্মানের সাথে নিয়ে যায়। সেনারা অনেক সময় প্যাগোডার কোষাগারের চাবিও দাবি করে। সেনাবাহিনী ধর্মকে শুধুমাত্র প্রচারের একটি রূপ হিসেবে
ব্যবহার করে। তারা সব সময় ধর্মের পক্ষ হয়ে মানুষকে বোকা বানায়। কিন্তু যখন তাদের
সাথে ধর্মীয় নেতারা দ্বিমত পোষণ করে, তখন তারা ভিক্ষুদের গ্রেপ্তার করে। এটা খুবই দুঃখজনক যে এমন একজন সন্ন্যাসীর সাথে
এমন করা হয়েছে যাকে পুরো গ্রামের শ্রদ্ধা করতেন।”
মান্দালে
আঞ্চলিক সংঘ ইউনিয়নের রাজা ধম্মা নামে একজন ভিক্ষু সদস্য জানিয়েছেন, যে ২০২১
সালে বৌদ্ধ ধর্মযাজকদের বেশ কয়েকজন সদস্যকে আটক করা হয়েছিল, যাদের প্রত্যেককে এই বছরের জুলাই মাসে গণতন্ত্রের পক্ষের সাথে কাজ
করার অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রাজা ধম্মা
বলেন, আরও অনেক সন্ন্যাসী যারা শান্তিপূর্ণভাবে অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করেছিলেন তারা "পলাতক" এবং সামরিক বাহিনীর দ্বারা
হেনস্তার শিকার হচ্ছে।
তিনি
যোগ করে বলেন, "[সেনাবাহিনী]
অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, দেশের
মঙ্গলের জন্য নয়, তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য।
“[তারপর থেকে] তারা প্রায়শই মঠগুলিতে অভিযান চালায়, বিভিন্ন
বিহারে অতিথি
ভিক্ষুদের তালিকা সরবরাহ করতে চাপ প্রয়োগ করা হয় এবং নিশ্চিত করে যে তাদের বিরোধিতাকারী সন্ন্যাসীরা
যেন কোন বিহারে আশ্রয় খুঁজে না পায়। ভিক্ষুণীরাও
এই নিষ্ঠুর এবং অমানবিক কাজ
থেকে রক্ষা পায় না।”
উল্লেখ্য,
এই বছরের এপ্রিলে, রাজধানী নেপিদিও-এর একটি আদালত ৭৬ বছর বয়সী অং সান সু চিকে দুর্নীতির
দায়ে অভিযুক্ত করে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
তার বিরোদ্ধে অভিযোগ আছে সে US$600,000 ঘুষ গ্রহণ করেছিলেন। পর্যবেক্ষকরা বলছেন যে সু চি’র
বিরোদ্ধে করা ১১টি ফৌজদারি মামলার একটি সিরিজের মধ্যে এই দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম যা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীকে ১৯০ বছরের সম্মিলিত সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারে।
এই
সঙ্কট থেকে উত্তরনের জন্য International Network of
Engaged Buddhists নামে
একটি সংগঠন জান্তা সরকারের রোশানলে বসবাসরত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীদের উদ্দেশ্যে জরুরি মানবিক ত্রাণ
সংগ্রহ করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক
তহবিল চালু করতে, ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলেতে ক্লিয়ার ভিউ প্রজেক্টের সাথে হাত মিলিয়েছে।